মহামারি করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। গত কয়েকদিনের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকায় বুধবার লেনদেনের শুরুতেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ১,৭৭০ ডলার ছাড়িয়েছে।করোনাভাইরাসের কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণ কিনে মজুত করছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম এমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।এর আগে ২০১২ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১,৭৭০ ডলারে উঠেছিল। এরপর গত ৮ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১,৭৭০ ডলার ছাড়িয়ে গেল।মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে চলতি বছরের শুরু থেকেই স্বর্ণের দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১,৪৫৪ ডলার। এরপর করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ১,৬৬০ ডলারে উঠে যায়।তবে মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়। এক ধাক্কায় দাম কমে প্রতি আউন্স ১,৪৬৯ ডলারে নেমে আসে। মার্চে দরপতন হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেয়নি।হু হু করে দাম বেড়ে মে মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ১,৭৪৮ ডলারে উঠে যায়। এরপর ছোটখাটো উত্থান-পতন হলেও এখন টানা বাড়ছে স্বর্ণের দাম। ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে।গত সপ্তাহ আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ১,৭৪৩ ডলারে উঠে। এতে বছরের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম বাড়ে ২৩ শতাংশ। অবশ্য মাসের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম দশমিক ২৯ শতাংশ কম থাকে।চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসের প্রতি কার্যদিবসেই স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সোমবার স্বর্ণের দাম বেড়ে ১৭৬২ ডলার স্পর্শ করে। মঙ্গলবারও দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। আর বুধবার এশিয়া অঞ্চলের বাজারে লেনদেনের শুরুতেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ১,৭৭২ ডলারে উঠে গেছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় আড়াই শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে প্রায় সাড়ে ২৪ শতাংশ বাড়ল স্বর্ণের দাম।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার বাংলাদেশে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সাধারণত ভরিতে এক-দেড় হাজার টাকা করে বাড়ানো হলেও এবার এক লাফে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়ানো হয়। মঙ্গলবার থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণের এই বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৯০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৬১৬ টাকা বাড়িয়ে ৪৭ হাজার ৬৪৭ টাকা করা হয়েছে।
স্বর্ণের এই দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে স্বর্ণের মূল্য সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। ফলে দেশীয় বুলিয়ন মার্কেটে স্বর্ণের মূল্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে বাজুস কার্যনির্বাহী কমিটির টেলি-কনফারেন্সে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৩ জুন থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্য নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে।’