ইকবাল কবির লেমনঃ বন্যা হলেই থৈ থৈ হাবুডুবু পানি আর পানি শুকিয়ে গেলেই ধুধু বালুচর। নদী অধ্যুষিত চরাঞ্চলগুলোর এটাই স্বাভাবিক অবস্থা। প্রকৃতির নির্মমতার সাথে যুদ্ধ করে যুগ যুগ ধরে টিকে রয়েছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। তেমনি কিছু চর রয়েছে যমুনা ও বাঙালি নদী অববাহিকার সোনাতলা উপজেলায়। চরগুলো হলো-পাকুল্লা উপজেলার পাকুল্লা, পূর্ব সুজাইতপুর, খাটিয়ামারী, রাধাকান্তপুর, তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নের চরমোহনপুর, সরলিয়া, ভিকনেরপাড়া, চুকাইনগর, খাবুলিয়া, জন্তিয়ারপাড়া,দাউদিয়ারপাড়া, সোনাতলা সদর ইউনিয়নের নামাজখালী, রংরারপাড়া,কামালেরপাড়া, জোড়গাছা ইউনিয়নের কুশাহাটা, পারবগা, সর্জনপাড়া, উত্তর বয়ড়া (আংশিক), মধুপুর ইউনিয়নের চরমধুপুর ও চরচকনন্দন। এ চরগুলোর মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান মাধ্যম কৃষিকাজ ও মাছ ধরা। বংশ পরম্পরায় চরে থাকা এ চিরসংগ্রামী মানুষগুলো নিজেদের পরিশ্রমে আর সরকারের সার্বিক সহায়তায় ধুধু বালিতে সোনা ফলাচ্ছে। সোনাতলা উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে গিয়ে একটু এদিক সেদিক তাকালেই এখন চোখে পড়ে সবুজের সমারোহ। চরের ইঞ্চি ইঞ্চি মাটির সদ্ব্যবহার করে পরম যতেœ এখন তারা আধুনিক পদ্ধতিতে সেখানে ফলাচ্ছেন ধান, গম, ভুট্টা,মরিচ,পাট, সরিষা, চিনা বাদাম, আলু, মিষ্টি আলু, সবজি, মশুর ডাল ও খেসারি ডাল। প্রতি বছর এ ফসলগুলোর উৎপাদন বেড়েই চলেছে। জুন মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চরাঞ্চলের এ জমিগুলোতে বন্যার কারণে পানি থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দীর্ঘায়িত বন্যার কারণে প্রায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার পানি থাকছে।
সোনাতলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ভুট্টা প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫০ মেট্রিক টন। ১০৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে তা অর্জনের চেষ্টা চলছে। ৮১০ হেক্টর জমিতে ২১৯০ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরে। এ অথৃবছরে ৩৬০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ করা হয়েছে। গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০০৮ মেট্রিক টন। এবছর ৩০৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩২ মেট্রিক টন। ৮৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে, লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭০৯ মেট্রিক টন। ২৭০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮২৪ মেট্রিক টন। ১৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫৫ মেট্রিক টন। ২৫ হেক্টর জমিতে ৪৬ মেট্রিক টন চিনা বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মশুর ডাল আবাদ করা হয়েছে ৬০ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ মেট্রিক টন আর ১৭০ হেক্টর জমিতে ৪২৫০ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোনাতলা উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুদ আহম্মেদ জানিয়েছেন, ‘সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ শুরু করেছে। চরাঞ্চলগুলোতেও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত জাতের বীজের মাধ্যমে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। যার ফলে প্রতিবছর চরাঞ্চলগুলোতে কৃষি সম্প্রসারিত হচ্ছে,বাড়ছে উৎপাদন। এছাড়াও সরকার প্রণোদনা হিসেবে চরাঞ্চলগুলোতে উন্নত জাতের ধান, গম, পিয়াজ, মাষকলাই, মশুর ও খেসারি ডালের বীজ প্রদান করেছে, দিয়েছে সার। এ ধারা অব্যাহত আছে। চরাঞ্চলের কৃষি নিয়ে সরকারের বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। এক্ষেত্রে সোনাতলা উপজেলার চরাঞ্চলগুলো কৃষিতে আরও এগিয়ে যাবে।’